Income Tax

কোন কোন সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ লাগবে।

ট্যাক্স সিস্টেম একটি স্বাভাবিক অংশ যা আমাদের সমাজে রয়েছে। যেকোনো আয়ের জন্য সরকার আয়কর আদায়ের ব্যবস্থা করে । একটি সময় যখন আপনার আয় বা আপনার ব্যবসায়িক কার্যক্রম থেকে প্রাপ্ত আয় আয়কর আদায়ের আওতায় পড়ে ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক আয়কর রিটার্ন জমা করে প্রমাণপত্র সংগ্রহ করতে হয়।

এখন একটি প্রশ্ন উঠতে পারে, কোন কোন সেবা নিলে আমাদের আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ লাগবে?

এই ব্লগ পোস্টে, আমরা সেবা নিতে যেসব ক্ষেত্রে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ লাগবে সেগুলি আলোচনা করব। তাই আপনি জানতে চান কোন কোন সেবা নিতে আয়কর রিটার্ন জমার প্রমাণ লাগে এবং সেগুলি কিভাবে সঠিকভাবে সম্পন্ন করবেন, তাহলে অবশ্যই এই পোস্টটি পড়তে থাকুন।

চাকুরীজীবিদের ক্ষেত্রে

০১. উৎপাদন কার্যক্রমের ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক বা তত্বাবধানকারী অবস্থানে কর্মরত ব্যক্তির বেতন-ভাতাদি প্রাপ্তিতে

০২. সরকার অথবা সরকারের কোন কর্তৃপক্ষ, কর্পোরেশন, সত্তা বা ইউনিটের বা প্রচলিত কোন আইন, আদেশ বা দলিলের মাধ্যমে গঠিত কোন কর্তৃপক্ষ, কর্পোরেশন, সত্তা বা ইউনিটের কর্মচারীর ১৬,০০০/- টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমান মূল বেতন প্রাপ্তিতে;

০৩. মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার বা এমপিও ভুক্তির মাধ্যমে সরকারের নিকট হতে ১৬,০০০/- টাকা বা তদূর্ধ্ব পরিমান কোন অর্থ প্রাপ্তিতে;

০৪. অ্যাডভাইজরি বা কনসালটেন্সি সার্ভিস, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট  ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ, নিবাপত্তা সরবরাহ সেবা বাবদ নিবাসী কর্তৃক কোম্পানি হতে অর্থ প্রাপ্তিতে;

ব্যাক্তিগত সঞ্চয় ও লোন গ্রহনকালে

০৫. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হতে ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণ গ্রহনে;

০৬. ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

০৭. ৫ লাখ টাকার বেশি পোষ্ট অফিস সঞ্চয়ী হিসাব খোলায়;

০৮. দশ লক্ষাধিক টাকার কার্ড ব্যালেন্স সম্পন্ন ব্যাংক হিসাব খোলা ও বহাল রাখতে;

০৯. ৫ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনলে;

ইউটিলিটি সেবা ও জমি বিক্রয় বা হস্তান্তর অথবা ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে

১০. যেকোন এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে এবং সিটি কর্পোরেশন এলাকায় গ্যাস সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

১১. সিটি কর্পোরেশন ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

১২. সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে কারও সন্তান বা পোষ্য পড়াশোনা করলে;

১৩. সিটি কর্পোরেশন, জেলা সদরের পৌরসভা ও ক্যান্টনমেন্ট বোর্ড এলাকায় ১০ লক্ষাধিক টাকার জমি, বিল্ডিং বা অ্যাপাটমেন্ট বিক্রয় বা হস্তান্তর বা বায়নামা বা আমমোক্তারনামা নিবন্ধন করতে;

১৪. রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চিটাগাং উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ), রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ), সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার অন্যান্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুমোদনের নিমিত্তে ভবন নির্মাণের নকশা দাখিল কালে;

ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে

১৫. কোম্পানির এজেন্সী বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

১৬. মোবাইল ব্যাংকিং বা ইলেক্ট্রনিক উপায়ে টাকা স্থানান্তরের মাধ্যমে এবং মোবাইল ফোনের হিসাব রিচার্জের মাধ্যমে কমিশন, ফি বা অন্য কোন অর্থ প্রাপ্তিতে;

১৭. সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভা এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে;

১৮. বাংলাদেশে অবস্থিত ভোক্তাদের নিকট ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যাবহার করে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ে;

১৯. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা সরবরাহের উদ্দেশে নিবাসী কর্তৃক টেন্ডার ডকুমেন্টস দাখিল কালে;

২০. মটরযান, স্পেস/স্থান, বাসস্থান অথবা অন্যান্য সম্পদ সরবরাহের মাধ্যমে শেয়ারড ইকোনমিক এক্টিভিটিজে অংশগ্রহন করতে;

কোম্পানীর ক্ষেত্রে

২১. আমদানি নিবন্ধন সনদ ও রপ্তানি নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

২২. আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র খোলায়;

২৩. পণ্য আমদানি বা রপ্তানি উদ্দেশে বিল অব এন্টি দাখিল কালে;

২৪. কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ারধারী হতে হলে;

২৫. পরিবেশ অধিদপ্তর বা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হতে উপাদনের অনুমতি প্রাপ্তি ও নবায়নে;

সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখার ক্ষেত্রে

২৬. চিকিৎসক, দন্তচিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড একাউন্টেন্ট, কষ্ট এন্ড ম্যানেজমেন্ট একাউন্টেন্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি অথবা সার্ভেয়ার হিসাবে বা সমজাতীয় পেশাজীবী হিসাবে কোন স্বীকৃত পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

২৭. উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন ও জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে গেলে।

২৮. ট্রেড বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

২৯. সমবায় সমিতির সদস্য হতে গেলে;

৩০. কোম্পানী আইন ১৯৯৪ (১৯৯৪ সনের ১৮ নং আইন) এবং Societies Registration Act 1860 (Act No. XXI of 1860) এর অধীন নিবন্ধিত কোন ক্লাবের সদস্যপদ লাভের আবেদনের ক্ষেত্রে;

লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়নকালে

৩১. ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রাপ্তি ও নবায়নে;

৩২. আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

৩৩. সাধারণ বীমার তালিকাভুক্ত সার্ভেয়ার হতে এবং লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে;

৩৪. The Muslim Marriage & Divorces (Registration) Act 1974 (LII of 1974) এর অধীন নিকাহ্ রেজিষ্টার হিসাবে লাইসেন্স প্রাপ্তি ও নবায়ন করতে;

৩৫. লঞ্চ,স্টিমার, মাছ ধরার ট্রলার, কার্গো,  কোষ্টার, কার্গো ও ডাম্ব বর্জসহ যেকোন প্রকার ভাড়ায় চালিত নৌযানের সার্ভে সার্টিফিকেট প্রাপ্তি ও বহাল রাখতে;

৩৬. বীমা কোম্পানীর এজেন্সি সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়নে;

৩৭. দ্বি-চক্র বা ত্রি-চক্র মোটরযান ব্যতীত অন্যান্য মোটরযান নিবন্ধন বা নবায়নে;

৩৮. এনজিও অ্যাফেয়ার্স  ব্যুরোতে নিবন্ধিত এনজিওতে বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি হতে লাইসেন্স প্রাপ্ত ক্ষুদ্র ঋন সংস্থার বিদেশি অনুদান ছাড়ে;

সরকারি-বেসরকারি ৩৮ ধরনের সেবা নেওয়া আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। চলতি অর্থবছর থেকে ৩৮ ধরনের সেবা নিতে করদাতাদের রিটার্ন জমার রসিদ দেখানো বাধ্যতামূলক করা হয়। আসছে বাজেটে এ বিধান আরও কঠোর করা হচ্ছে।

এছাড়াও বাজেট ২০২৩-২০২৪ এ যে ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে

  • করযোগ্য আয় থাকুক আর না-ই থাকুক, ন্যূনতম ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা কর দিয়ে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে। ন্যূনতম এ কর না দিলে মিলবে না সরকারি-বেসরকারি ৩৮ সেবা।
  • শেয়ার বাজারে বিনিয়োগে রেয়াতের সুবিধা বাতিল হতে পারে।
  • করমুক্ত আয়ের সীমা ৩৫০,০০০ টাকা হতে পারে।
  • জমি রেজিষ্টেশন বাবদ উৎসে করের পরিমাণ বাড়তে পারে।
  • রিটার্ন না দিলে সরকারী কর্মকর্তাদের বেতন বন্ধ হতে পারে।
  • উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত সম্পদের উপরে কর আরোপের সুপারিশ করা হয়েছে।
  • একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কর আরোপ হতে পারে।
  • আরও ৬ টি সেবা নিতে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হতে পারে।

আগামী ১ জুন ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণা করা হবে। সেখানে এই প্রস্তাব দিতে পারেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। তবে বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়। কারণ, আয়কর অধ্যাদেশের সঙ্গে বিষয়টি সাংঘর্ষিক হবে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এনবিআর সূত্রে আরও জানা গেছে, নতুন প্রস্তাব পাস হলে করমুক্ত আয়সীমার নিচে আয় থাকলেও নির্ধারিত সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে সব সেবাগ্রহীতাকেই ন্যূনতম কর দিতে হবে। এনবিআরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, ৩৮ ধরনের সরকারি-বেসরকারি সেবা যাঁরা গ্রহণ করেন, তাঁদের আয় করমুক্ত আয়সীমার বেশি বলে ধরে নিয়েই নতুন এই ব্যবস্থা চালুর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছর থেকে করমুক্ত আয়সীমা বার্ষিক তিন লাখ টাকা বাড়িয়ে সাড়ে তিন লাখ টাকা করা হতে পারে।

কোনো করদাতা ন্যূনতম কর না দিলে সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো এসব সেবা দিতে পারবে না বলে জানা গেছে। আগামী অর্থবছরে সেবার এ তালিকা আরেকটু বড় করা হতে পারে বলে এনবিআর সূত্রে জানা যায়।

Spread the love

Recent Posts

Automate Your Payroll: Generate Payslips with Mail Merge Easily

In today’s HR and accounting workflows, generating payslips efficiently and accurately for multiple employees is… Read More

3 months ago

Convert Number to Text in Excel: A Complete Guide

When preparing vouchers, sales invoices, or financial reports in Excel, it’s often necessary to spell… Read More

4 months ago

How to Calculate Tax on Rental Income as per the 2023 Income Tax Act

বাড়ি বা জমি ভাড়া দিয়ে আয় করা আমাদের অনেকের জন্যই এক গুরুত্বপূর্ণ আয়ের উৎস। তবে,… Read More

10 months ago

Uncovering the Secrets of Service VAT Rate & It’s Exemption

Are you curious about how VAT rates and its exemptions is impact on businesses and… Read More

1 year ago

Navigating Incoterms: A Practical Approach

Incoterms (International Commercial Terms) defined by the International Chamber of Commerce (ICC). Incoterms are a… Read More

1 year ago

Unlocking the Secrets of VAT Registration in Bangladesh.

Are you a business owner in Bangladesh looking to navigate the complex world of VAT… Read More

1 year ago